খাঁটি গম্ভীর কথা বেশ কিছু হলো একটু চ্যাপলিনসুলভ কথা বলি। স্বাধীনতার
স্বাদহীনতা টের পেতাম প্রত্যন্ত মফস্সলের অত্যন্ত গরীব আবাদে, যেখানে জড়ো
হয়েছিল মূলহীন উৎখাত বাঙালদের এক দুঃখী জেদী পরিশ্রমী দঙ্গল, কী অবিশ্বাস্য
জাদুবলে তারা এক জীবনেই অজানা জমিতে ফিরিয়ে এনেছিল কপর্দকশূন্যতা থেকে
সদর্থক পূর্ণতা। সে অবশ্য এক আলাদা গল্প। স্বাধীনতা
দিবস এর সক্কালে পাড়ার প্রবীণ মহাদেব বণিক মশাই সোডাকাচা খেঁটো ধুতিটা
মালকোঁচা মেরে আর নীল কামিজ অঙ্গে দিয়ে ঘরে-বানানো এক পতাকা হাতে আগে আগে
চলতেন আর হাঁক পাড়তেন - "ন্যাতাজী সুবাস-" আর আমরা সমস্বরে কিচিরমিচির
শিরফুলিয়ে বলতাম - " ফিরে এস !!! " এখানে একটা ব্যাপার ছিল। বরিশালী
বাচ্ছারা বলতো " ফির্গীয়া আও" , ঢাকাইয়ারা " ফিরা আসো", যশুরেরা "ফিরররিয়ে
আস্যও" আরো ইত্যাদি ইত্যাদি বিবিধ বিচিত্র। সে ক্যাচাল শুনে মহা রেগে
মহাদেব জ্যেঠু বার বার প্রাণ ঢেলে আমাদের শেখাতেন "ওরে হারামজাদারা আমি
জ্যামনি কমু ""ন্যাতাজী সুবাস -" , তরা ত্যামনি একলগে এক সুরে তালে
চিকরাবি "ফিরা আহ" , বুঝলি রে বদমাইশের গুষ্ঠি , "ফিরা আহ" ,"ফিরা আহ" ,
কথাডা হইলো গিয়া "ফিরা আহ" !! তা
সেইভাবে আমরা সেই প্রভাতফেরী নিয়ে কারো বাগানের বেগুণ মাড়িয়ে কারো খাটালের
গরু তাড়িয়ে ঘেমেনেয়ে ফিরে এলে পাড়ার মনোহরদার দোকানে একটি মাত্র একটিই করে
গরম গরম অমৃতের মতন জিলিপি যার নাম ছিল জিলাপী তা পেতাম। একবার
এক দুষটু দাদার চালাকি তে ভুলে আমরা প্রভাতফেরী না করেই মিথ্যে কথা বলে
মনোহরদার জিলিপি খেয়েছিলাম। সেবার মহাদেব জ্যেঠু অসুস্থ ছিলেন, অনেক পরে
শুনেছিলাম সেই অল্পশিক্ষিত টাইপ-শেখানো মানুষটি নাকি কেঁদে ফেলে বলেছিলেন
"বাচ্চাগুলান এইয়া করলে, অরা দ্যাশ চালাইবে ক্যাম্বায় ?" আজ দেখি চারিদিকে
আর নিজের দিকেও, আর ভাবি, সত্যি, আমরা দ্যাশ চালামু ক্যাম্বায় ?????
Still there, though almost still
Comments